Quantcast
Channel: টেকটুইটস
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3243

কিভাবে দূর করা যায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি

$
0
0

 

 

পরীক্ষাভীতি যে কোন ধরনের এবং যে কোন বয়সের শিক্ষার্থীদের কাছে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এটি অস্বভাবিক কোন ব্যাপার নয়। কারুর কারুর ক্ষেত্রে ভীতিটি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, শরীর ও মনে প্রচন্ড অস্বস্তি বিরাজ করে। ফলে পরীক্ষায় যেসব উত্তর দিতে পারার কথা সেগুলোও সব গোলমেলে করে ফেলে অনেক শিক্ষার্থী। তারা খাওয়া-দাওয়া, গোসল করা ছেড়ে দেয়। এক্ষেত্রে বাবা-মা, ভাইবোন ও শিক্ষকদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

তাদের বুঝতে হবে যে, খাওয়া-দাওয়া করলে, ঘুম না হলে, গোসল না করলে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষেত্রে যে সব সমস্যার সৃষ্টি হয় তা তাদের পরীক্ষার জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শরীর ও মনের মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। শরীর খারাপ হলে মনেও খারাপ হবে। মন খারাপ হলে শরীর খারাপ হয়। আর শরীর বা মন যে কোন একটি খারাপ হলে পরীক্ষা ভাল হওযার সম্ভাবনা কম থাকে। পরীক্ষা দেওয়া হচেছ শরীর, মন ও প্রস্তুতির মধ্যে এক নিবিড় বন্ধন।কাজেই পরীক্ষা ভালভাবে দিতে হলে, পরীক্ষায় ভাল করতে হলে পরীক্ষার পূর্বে শরীর ও মন অবশ্যই ভাল রাখতে হবে। আর তা করতে হলে নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজগুলো যেমন খাওয়া-দাওয়া, গোছল, ঘুম, হাঁটাচলা সবই ঠিকভাবে করতে হবে। পরীক্ষাভীতির কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা এগুলো ছেড়ে দেয় বা অনিয়মিতভাবে করে থাকে ফলে তাদের শরীর ও মনের ওপর এর বিরুপ প্রভার পড়ে। আর তার ফলে অনেক জানা বিষয়ও তারা ভুল করে থাকে। কাজেই পরীক্ষাভীতি কিভাবে জয় করা যায় সে চেষ্টা আমাদের চালাতে হবে।

প্রথমত, নিয়মিত পাঠ শেষ করা, নিয়মিত পাঠ সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যাবলী সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হচেছ পরীক্ষাভীতির প্রধান ও মোক্ষম ঔষধ।বছরের শুরুতে এবং প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করা হলে পরীক্ষার সময় বেশি চাপ থাকেনা, ফলে ভীতি অনেকটাই কমে যায়।পড়া জমিয়ে রাখলে টেনশন বাড়ে এবং তা অসহনীয় হয়ে ওঠে পরীক্ষার পূর্বে। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন করে ফেললে পরীক্ষা নিয়ে মানসিক চাপ থাকেনা ফলে শরীর ও মন থাকে প্রফুল্ল।আর প্রফুল্ল মন নিয়ে পরীক্ষা দিলে তার ফল ভাল সাধারনত হওয়ার কথা।
নিয়মিত কাজ করার পরেও যে একেবারে টেনশনমুক্ত থাকা যাবে পরীক্ষার পূর্বে বিষয়টি এমন নয়। পরীক্ষার পূর্বে টেনশন হবেই, এটিই স্বাভাবিক। পরীক্ষার পূর্বে বিদ্যালয়ে আনন্দঘন কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে যা শিক্ষার্থীদের শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখবে। যেখানে থাকবে বিভিন্ন ধরনের কৌতুক, ফান, খেলাধুলা ও মজা করার নানা আয়োজন। এ বিষয়গুলো তাদের সমস্ত অর্গানকে সতেজ করবে, রক্ত চলাচল বাড়াবে, স্ট্রেস কমাবে, পরীক্ষার টেনশন থেকে তাদের মুক্ত রাখবে। শিক্ষার্থীরা হাসবে, নাচবে, নাচাবে, গাইবে এবং গাওয়াবে যা তাদের ভেতরের চাপ ও ভীতিকে দুরে সরে যেতে সাহায্য করবে। পরীক্ষার পূর্বে বিদ্যালয়গুলো এ ধরনের কর্মকান্ডের আয়োজন করলে শিক্ষার্থী তথা পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে। নতুনভাবে তারা উজ্জীবিত হবে।

পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কোন কোন প্রশ্নের উত্তর কখন দিতে হবে, কত সময়ের মধ্যে দিতে হবে তার রিহের্সাল এবং ’ মক টেস্ট’ আগে দিলে মূল পরীক্ষার ভীতি কমে যাবে। কারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে তাদের কোন প্রশ্নে কত সময় লাগবে। সময় তাদের হাতে, তারা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে পরীক্ষার পুরো সময়।তাই পরীক্ষার পূর্বে শ্রেণিকক্ষে কিছু ’মক টেস্টে’র আয়োজন করা যেতে পারে। আমাদের বিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারগুলো অবশ্য অনেক পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে মূল পরীক্ষার পূর্বে। এই পরীক্ষাগুলো অবশ্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার স্বাদকে তেতো করে ফেলে।

অভিভাবকদের সাথে সভা করে তাদের মত বিনিময় করা যেতে পারে যাতে তারা পরীক্ষার্থীদের খাবার দাবার, নিয়মিত কাজগুলো ঠিকমত করার তাগিদ দেন ও ব্যবস্থা করেন। বাসায় টিভির অনুষ্ঠানগুলো লাগামহীন ভাবে না দেখা পরীক্ষার রাতে –এসব বিষয়ে কিছু কিছু অভিভাবকদের অনুরোধ করা যেতে পারে কারণ কিছু পরিবারে এ ধরনের ঘটনাও ঘটে অর্থাৎ অভিভাবকগন তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ও পরীক্ষাকে খুব একটা গুরুত্ব দেননা। একেিদক তারা পড়েছে অন্যদিকে টিভিতে তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান চলছে——–এ অবস্থায় পরিক্ষার্থী পড়তেও পারবেনা আবার টিভিও দেখতে পারবেনা, ফলে তার মনের মধ্যে এক ধররেন অস্বস্তি বিরাজ করে যা পরীক্ষাভীতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার পরে অনেককেই আর একত্রে পাওয়া যাবেনা কারন বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে যাবে, বিভিন্নভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। হয়েছিলও তাই,্ শিক্ষা সফরটি আর কখনও হয়নি, সারা জীবনের জন্য ঐ ধরনের এক আনন্দ ও বাস্তবজ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা। এভাবে দেখা যায় যে, পরীক্ষভীতি আমাদের জীবনের অনেক অনাবিল আনন্দ কেড়ে নেয়। পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি সমর্থন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস সিরজাুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একজন শিক্ষার্থী একটা বিষয় পড়ার পর সে কী শিখল তা যাচাই করার জন্য একটি ভালো পদ্ধতি হলো তাকে কিছু লিখতে বলা। এখন তারা যা শিখছে এবং যে পদ্ধতিতে তাদের পরীক্ষা নেয়া হচেছ তাতে আমরা ফলাফলের উর্ধ্বগি তবা ফল বিস্ফোরণ দেখছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্থি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, ফলাফলের এ বিষ্ফোরণের সাথে মানের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি কমানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।মুখে সৃজনশীল বলছি আর দাবি করছি অথচ শিক্ষার্থীরা ও অনেক শিক্ষকও সরাসারি সাহায্য নিচেছ নোট আর গাইড বইয়ের। আবার বলা হচেছ নোট ও গাইড বই পড়া যাবেনা। এই দ্বিমুখীতাও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি বাড়াচেছ। বর্তমানকালের সৃজনশীল প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি আসলেই আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সৃজনশীলতা মানে শিক্ষার্থীদের হুবহু মুখস্থ করতে হবেনা, বরং নিজের বুদ্ধি খাঁটিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিবে যেটি ছিল আনন্দের বিষয়। এখন তার পরিবর্তে বাড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক ও শ্ক্ষিকদের টেনশন।অনেক শিক্ষকের কাছেই সৃজনশীলতা বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়, কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নিচেছ। সৃজনশীলরে আওতা যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে নোট-গাইড ও কোচংিনর্ভিরতা। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। আর তা শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেয়ার পরিবর্তে দিচেছ ভয়, মনে সৃষ্টি করছে সন্দেহ এবং এগুলোই সবাই তাদের পরীক্ষাভীতি বাড়াচেছ। এ থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতেই হবে।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3243

Trending Articles