অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে ফেসবুক। ফেসবুকে এক বিলিয়ন ইউজারের মধ্যে ২০ লাখেরও বেশি সক্রিয় বিজ্ঞাপন রয়েছে বলে জানায় ফেসবুক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ আয় বিবরণীতে শুধু বিজ্ঞাপন থেকেই ৫৬৩ কোটি ডলার আয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই মোবাইল বিজ্ঞাপন।
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক। ই-লাইফের এই সোশ্যাল সাইটটি প্রায় এক বিলিয়ন ইউজার রযেছে। আবার এদের মধ্যে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ইউজার ফেসবুক-এ লাইক, কমেন্ট করে থাকেন। অর্থাৎ ফেসবুক বিজ্ঞাপনের অন্যতম বড় মাধ্যম তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ইউটিউব চ্যানেল, টিভি, রেডিও ইত্যাদির মতো ফেসবুকও বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার কোম্পানি/পেজ/ওয়েবসাইট/প্রোডাক্ট-এর বিজ্ঞাপন মুহূর্তে গ্রাহকদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
ফেসবুক বিজ্ঞাপন জনপ্রিয়তার কারণ
বর্তমানে প্রযুক্তি অনেক উন্নত। অনেকেই ইন্টারনেট বলতেই ফেসবুককে বুঝে থাকেন। ফেসবুকে প্রবেশ করলে সহজেই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। হয়তো এ কারণেই ফেসবুক ইউজাররা দিনে অন্তত একবার হলেও চেকইন করেন। অনেকেই পত্রিকা পড়েন না। প্রযুক্তিনির্ভর এ সময়ে ফেসবুকেই সব ধরনের অনলাইন নিউজ পেয়ে যাচ্ছেন। তাই বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পত্রিকার বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর না করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এতে সহজেই বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে প্রতিষ্ঠান কিংবা পণ্যের তথ্য পৌঁছে দিতে পারছেন। তাই ফেসবুক বিজ্ঞাপন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর আমাদের দেশে গতানুগতিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় পেপার-পত্রিকায়, যা কিনা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা বয়সের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য অনেকেই ফেসবুককে বিজ্ঞাপনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় কিছু বিষয়
অনেক ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেসবুক বিজ্ঞাপন দেওয়ার পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে। এতে বিজ্ঞাপনগুলোর মূল উদ্দেশ্য তো হাসিল হয়ই না, বরং বিজ্ঞাপনদাতার অযথা খরচ হয়ে থাকে। এর কারণ বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা বা সঠিক পদ্ধতি না থাকার ফলে এমনটা ঘটে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নতুন উদ্যোক্তা বা কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে থাকেন, তবে ফেসবুকে সাশ্রয়ে যথাযথভাবে উন্নতমানের বিজ্ঞাপন দিতে নিচের চারটি টিপস সহায়তা করবে আপনাকে।
কনভার্সন পিক্সেল
প্রতিটি বিজ্ঞাপনের প্রচারণাকালে বিজ্ঞাপনদাতার উচিত কনভার্সন পিক্সেল তৈরি করা। বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বিক্রি বাড়ানো বা ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ যাই হোক না কেন, কনভার্সন পিক্সেল অ্যাকুইজিশন প্রতি আপনার ব্যয়ের হিসাব রাখবে। এতে বিজ্ঞাপনটি কতটা কার্যকরী ও সফল, সে বিষয়ে আপনি স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
বিজ্ঞাপনের অবস্থান
ফেসবুকে ‘অ্যাড ম্যানেজার’ ফিচারে ‘ব্রেকডাউন’ এর নিচেই রয়েছে ‘প্লেসমেন্ট’ অপশনটি। এ অপশনটি ব্যবহার করে ডেস্কটপ কম্পিউটার ও মোবাইলের নিউজ ফিডসহ অন্যান্য জায়গায় বিজ্ঞাপনের সফলতার ওপর নজর রাখা এবং এর ওপর ভিত্তি করে অকার্যকর বিজ্ঞাপনগুলো সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাই ফেসবুক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সাশ্রয় করতে চাইলে এই অপশনে নজর রাখার কোনো বিকল্প নেই।
সময়
দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অনলাইনে ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এ জন্য ফেসবুক অ্যাডস ম্যানেজার ফিচারে রয়েছে ‘বাই টাইম’ অপশনটি। এটি ব্যবহার করে দৈনিক, সাপ্তাহিক, দ্বি-সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে বিজ্ঞাপনের সময়কাল নির্ধারণ করা যাবে। সময়কাল ঠিক থাকলে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন সফল হবে।
বয়স ও লিঙ্গ
নারী-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ ভেদে পণ্যের চাহিদা এবং বিজ্ঞাপনে সাড়া দেওয়ার হার ভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারে ‘ব্রেকডাউন’ অপশনের নিচেই থাকা ‘এজ অ্যান্ড জেন্ডার’ কলামে বয়স ও লিঙ্গ ভেদে ওয়েবসাইটে প্রবেশ, ব্যয় এবং কনভার্সনের হিসাব পাওয়া যাবে। এর ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য ও ধরন নির্ধারণ করলে সফলতা অর্জনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।
ফেসবুক অ্যাডস ম্যানেজার ফিচারে এসব খুঁটিনাটি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অপশন ব্যবহার করেই আপনার বিজ্ঞাপন থেকে সর্বোচ্চ লাভের মুখ দেখতে পারেন। ফেসবুক বিজ্ঞাপনের আগে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।