অনলাইনে কেনা বেচার মাধ্যম হচ্ছে ই-কমার্স। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন: মোবাইল কমার্স, ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফার, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারনেট বিপণন, অনলাইন লেনদেনের প্রক্রিয়াকরণ এবং ইলেকট্রনিক্স ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (ইডিআই)। আধুনিক ইলেকট্রনিক্স কমার্স আমাদের জীবনে একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে যা নাকি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।
১৯৬০ সালে ইলেকট্রনিক্স ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (ইডিআই) এর মাধ্যমে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়। ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে দ্রুত ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালে এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বিশেষ করে ১৯৯৫ সালে আমাজন ও ইবের মাধ্যমে ই-কমার্সের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ২০১০ সালের পরবর্তিতে মোবাইলের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে ই-কমার্সের নতুন যাত্রা যোগ হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে। এর ফলস্রুতিতে ২০১৩ সালে ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনা-বেচা হয়, যার ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মোবাইলের মাধ্যমে আমেরিকার বাজারে কেনা-বেচা হয়। দিনদিন এর পরিমান বেড়েই চলছে। বর্তমানে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা কত টুকু তা আমরা নিচের চার্টটি দেখলেই বোঝতে পারবো:
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রতিটি ৩০ সেকেন্ডে গড় লেন-দেন | |
মাধ্যম | মার্কিন ডলার |
সকল মাধ্যম | ১২,০১,১৭৩ |
কম্পিউটার | ৯,৩১,৪৯০ |
মোবাইল | ২,৬৯,৬৮৩ |
প্ৰাথমিক ভাবে ই-কমার্সকে চার ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ
১. Business to Business (B2B)
২. Business to Consumer (B2C)
৩. Consumer to Consumer (C2C)
৪. Consumer to Business (C2B)
(১) Business to Business (B2B): B2B এমন একটি ই-কমার্স মাধ্যম, যেখানে একটি পাইকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সেবা অথবা পণ্য অপর একটি পাইকারী বা খুচরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেচা-কেনা করা হয়। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ব্যবসাটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কারণ বিশ্বব্যাপী যেকোন দেশের সাথে খুব সহজে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। এই ধরণের ওয়েবসাইটের মধ্যে জনপ্রিয় আলিবাবা, ইন্ডিয়ামার্ট, গ্লোবালসোর্স ইত্যাদি। ইতিমধ্যে আমাদের বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহতম ওয়েবসাইট হিসেবে বাংলাদেশ ট্রেড ডেভলাপমেন্ট কাউন্সিল (বিডিটিডিসি), তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
(২) Business to Consumer (B2C): ই-কমার্সের খুচরা বিক্রেতার সাথে ভোক্তার ব্যবসায়িক সম্পর্ককে B2C বলে। দৈনন্দিন জীবনে ভোক্তার প্রয়োজনীয় পণ্যসমূহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ক্রয় করতে পারছে। এর মধ্যে বহুল জনপ্রিয় হচ্ছে: ইবে, আমাজন ইত্যাদি।
(৩) Consumer to Consumer (C2C): লেনদেনের ক্ষেত্রে দুই ভোক্তার মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ককে C2C বলে। এই ক্ষেত্রে দুই ভোক্তার মধ্যে ই-কমার্স যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশের দুইটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হচ্ছে এখানেই.কম এবং বিক্রয়.কম।
(৪) Consumer to Business (C2B): একাধিক ভোক্তার পণ্য অথবা সেবা কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন করাকে C2B বলে। এক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি তাদের পণ্য অথবা সেবা সমূহ একটি ই-কমার্সের মাধ্যমে তোলে ধরে। পরবর্তিতে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন ও দক্ষতার ভিত্তিতে যেকোন একজনকে বেছে নেয়। এই রকম একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হচ্ছে ফিবার.কম।
আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীও পণ্যের বাজার সম্প্রসারনে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (বিডিটিডিসি) নামে এই প্রতিষ্ঠানটি। আগামীতে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশীয় বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার কাজী আহমেদ। B2B ধারার এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশিও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিশ্বজুড়ে দেশী পণ্যের প্রদর্শনী করবে ও বিদেশী ক্রেতার সাথে দেশী বিক্রেতার যোগাযোগে গুরুত্বপূণ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে তাদের ব্যবসার উন্নতির ধারাবাহিকতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে বহিঃপ্রকাশ পাবে। এরই মধ্যে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে অনলাইনে পাইকারী সেবা দিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ডেভোলাপমেন্ট কাউন্সিল (BDTDC)।