আমরা অনেকেই হয়ত একটা ব্যাপার জানি না যে, একটি গিফট কার্ড হতে পারে অনলাইনে যেকোনো ধরণের পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে দারুণ বিকল্প। আমি আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব কীভাবে আপনি একটি গিফট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে খুব সহজেই পেমেন্ট প্রসেসিং করতে পারবেন। তবে গিফট কার্ড এর আলোচনায় একটু পরে যাচ্ছি। আগে কয়েকটা দারকারি ব্যাপারে একটু আলোকপাত করি-
অনলাইনে পেমেন্ট – প্রযুক্তির যে খাতে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি
আমাদের দেশে প্রযুক্তিক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হওয়ার খবর নিয়মিত শোনা যায়, অথচ সবচেয়ে দরকারি ব্যাপারেই এখনও আমাদের কোন অগ্রগতি নেই। সেটা হচ্ছে অনলাইন পেমেন্ট ব্যাবস্থা। বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে পেমেন্ট করা এবং পেমেন্ট আনা – উভয় ক্ষেত্রেই এখনও আগের মতই সমস্যা বিদ্যমান। আগের থেকে বরং সমস্যা বেড়েছে। আমাদের দেশ থেকে এখনও বাইরে পেমেন্ট করা যায় না; সবচেয়ে সহজ পেমেন্ট সিস্টেম পেপাল এখনও এদেশে আসেনি, ইন্টারন্যাশনাল ইকমার্স শপ অ্যামাজন, ইবে কিংবা আলি এক্সপ্রেস এর বাংলাদেশে সারভিস নেই; ফ্রি ল্যান্সাররা বাইরে থেকে টাকা এনে ক্যাশ করতে গিয়ে অনেক ঝামেলায় পড়েন; গুগল এডসেন্স বাংলা ওয়েবসাইট সাপর্ট করে না, ইউটিউব পার্টনারশিপ বাংলাদেশে এপ্রুভ করে না – আরও কত যে সমস্যা!
ফ্রিল্যান্সাররা কিন্তু বর্তমান সময়ে বাইরে থেকে দেশে অর্থ আনয়নে ভাল ভুমিকা রাখছে। অথচ এই দিকে সরকারের নজর নেই। ফ্রিল্যান্সারদের সুযোগ সুবিধার দিকে নজর দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন আগ্রহ দেখি না। এখন দেখা যাচ্ছে লেখাপড়া জানা অনেক তরুণ তরুণী অনলাইনে কাজ করে আয় করার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। এবং এটা আমাদের দেশে অনেক সম্ভাবনাময় খাত। তাছাড়া অনেকেই এখন অনলাইনে ইকমার্স শপ কিংবা ফেসবুক পেইজ শপ খুলে বিজনেস শুরু করেছেন। তারাও নিজেদের পণ্যের ফেসবুকে পেইড বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে প্রবলেমে পড়ছেন। পেমেন্ট করার কোন সহজ কায়দা নাই!
তাই অবস্থাদৃষ্টে এমন হয়েছে যে, কোন পণ্য কেনা বা সার্ভিসে সাবস্ক্রাইব করার জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করা লাগবে – এটা শুনলেই আমরা বাংলাদেশিরা হতাশ হয়ে যাই। দেশে জ্ঞান – বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়েছে বলে আমরা বড় গলায় কথা বলি, অথচ এখনও অনলাইনে সহজভাবে পেমেন্ট করার কোন রাস্তা খুঁজে পাইনি আমরা।
গিফট কার্ড ব্যবস্থা হতে পারে একটি বিকল্প সমাধান
আজ আমি আপনাদের অনলাইনে পেমেন্টের একটা সমাধানের কথা বলব। এটা হয়ত পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। তবে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো তো, তাই না? এই সমাধান হচ্ছে গিফট কার্ড। আপনি চাইলে একটা গিফট কার্ড এর মাধ্যমে পেমেন্টের এই সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। যেসব ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করতে গেলে মাস্টারকার্ড লাগে, সেই সব ক্ষেত্রে আমরা একটি গিফট কার্ড ব্যবহার করেও কাজ করতে পারি। অর্থাৎ আপনি চাইলে বাংলাদেশে বসে একটা গিফট কার্ড নিয়ে মাস্টারকার্ড এর মত করে ব্যবহার করতে পারবেন।
আমি গিফট কার্ড কে এই ক্ষেত্রে পেমেন্টের সেরা বিকল্প বলছি এই জন্য যে আপনি একটি গিফট কার্ড বাংলাদেশ থেকে সহজেই পেতে পারেন। এখানে আপনাকে বাড়তি কোন খরচ, ফিস বা ট্যাক্সের ঝামেলা পোহাতে হবে না। বড় বড় ইকমার্স শপগুলো (যেমন – অ্যামাজন, আলিএক্সপ্রেস, ইবে ইত্যাদি) এই বিশেষ ধরণের গিফট কার্ড দিতে পারে। এর কারণ তারা মাস্টারকার্ড এর মার্চেন্ট একাউন্টধারী। তারা নিজেদের মাস্টারকার্ডের একটা এক্সটেনশন কোডকে গিফট কার্ড হিসেবে ক্রেতাকে প্রদান করে এবং ক্রেতা সেই কার্ড এর কোড ব্যবহার করে অনলাইনে খরচ করতে পারে। এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত বলছি। তার আগে চলুন দেখি গিফট কার্ড আসলে কি?
গিফট কার্ড কি এবং কেন ইস্যু করা হয়?
গিফট কার্ড বা গিফট ভাউচারকে গিফট টোকেন এবং গিফট সার্টিফিকেটও বলা হয়। এটা আসলে গিফট ভাইচার যা দিয়ে অনুমোদিত শপ থেকে নির্দিষ্ট অংকের পন্য সেবা কেনা যায়। এটা রিসেলার বা ব্যাংক এর পক্ষ থেকে ইস্যু করা হয়ে থাকে। এটা নগদ টাকা দিয়ে পন্য কেনার একটা বিকল্প মাধ্যম।
অনলাইনে গিফট কার্ড বলতে একটা ভার্চুয়াল কার্ডকে বোঝায়। এখানে আপনাকে হাতে কোন কার্ড দেওয়া হবে না। আপনি আপনার ইমেইলে পাবেন একটা কার্ডের কোড নাম্বার ও সিকিউরিটি বা পিন নম্বর এবং অন্যান্য ডিটেইলস। এটা ব্যবহার করে আপনি কোন কিছু কিনতে পারবেন বা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ব্যয় করতে পারবেন কোন সারভিস নিতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শপ থেকে পণ্য কেনার জন্য গিফট কার্ড দেওয়া হয়।
অফলাইনেও গিফট কার্ডের প্রচলন আছে। সাধারণত কোম্পানীগুলো তাদের প্রমোশন এবং মার্কেটিং কৌশল হিসেবে গিফট ভাউচার অফার করে থাকে। কখনো কখনো ক্যাশব্যাক মার্কেটিং এর বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার দেখা যায়। এতে ইস্যুকারী কতৃপক্ষ তাদের গ্রাহকদের জন্য একটা উপহার অফার করে যা দিয়ে অনুমোদিত শপ থেকে উল্লেখিত অংক কেনাকাটা করতে গ্রাহককে নগদ অর্থ দিতে হয়না। অর্থের বদলে ভাউচার দিলেই হয়। আজকাল অনেকে গিফট ভাউচারের বদলে পয়েন্টও দিয়ে থাকেন। পরে গ্রাহক পয়েন্ট বিনিময় করে পন্য ক্রয় করতে পারেন। এসবই গিফট কার্ড এর আওতার মধ্যে পড়ে।
কোন ধরণের গিফট কার্ড আমাদের প্রয়োজন?
গিফট কার্ড আবার দুই ধরণের হতে পারে।
১. যে কার্ড দিয়ে শুধু মাত্র ঐ অনলাইন সাইটে শপিং করা যায়। (যেমনঃ Amazon gift card, iTunes Gift Card, Wal-Mart gift card, Target gift card)
২. কমন গিফট কার্ড, যা দিয়ে অনলাইনে সব ধরনের সাইটে পেমেন্ট করা যায়। (যেমনঃ One4ALL gift Card, American Express gift card, Visa Gift Card)
আমাদের টার্গেট এই দ্বিতীয় প্রজাতির গিফট কার্ড। এগুলো দিয়ে আমরা অনলাইনে যেকোনো যায়গায় পেমেন্ট করতে পারবো। একটি কমন গিফট কার্ড যা মাস্টারকার্ড, ভিসা কার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেস সরবরাহ করে থাকে, তা দিয়ে পেমেন্টের ক্ষেত্রে আপনার কোন বাধা থাকছে না। এই গিফট কার্ড দিয়ে আপনি যা যা করতে পারবেনঃ
– অনলাইনে কেনাকাটা করা (যেমনঃ Amazon, E-Bay, Ali express, Overstock etc.)
– প্লেনের টিকেট কাটা, হোটেল বিল, গাড়ি ভাড়া সহ সমস্ত খরচ অনলাইনে পরিশোধ করা।
– ফেসবুক, গুগল এবং অনলাইনে বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন এর জন্য পেমেন্ট করা
– অনলাইনে GRE, TOFEL, GMAT, SAT ইত্যাদি পরিক্ষার ফি প্রদান করা
– Godaddy, namecheap, bluehost, hostgator থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা
– অনলাইন মিডিয়া বাইং এর পেমেন্ট করা
তারমানে দাঁড়াচ্ছে যে, অনলাইনে আমাদের যাবতীয় পেমেন্ট সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য একটা গিফট কার্ড যথেষ্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কার্ড কীভাবে নেব?
আপনি কীভাবে একটি কমন গিফট কার্ড নিতে পারেন?
ধরুন যে আপনি একটি ২৫ ডলারের ভিসা কার্ড নেবেন। কার্ডটা তো আপনাকে কিনতে হবে। কার্ড কেনার জন্য পেমেন্ট করতে হবে! তাহলে আপনি কীভাবে পেমেন্ট করবেন? ভিসা তো বাংলাদেশ থেকে টাকায় পেমেন্ট নেবে না! তারমানে ডলারে পেমেন্ট করতে হবে বাংলাদেশ থেকে। কীভাবে পেমেন্ট করব আমরা? বাংলাদেশ থেকে তো অনলাইনে পেমেন্ট করা যায় না! এখানেও ঠিক একই যায়গায় এসে আমরা থেমে গেলাম।
না থামতে হবে না! দুইটা বিকল্প সমাধান রয়েছে আপনার হাতে!
প্রথমতঃ আপনার যদি দেশের বাইরে আত্মীয় স্বজন থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তারা খুব সহজেই আপনাকে একটা ভিসা কার্ড কিনে দিতে পারেন। ইউরোপ আমেরিকার প্রায় প্রত্যেক দেশ থেকে অনলাইনে ডলারে পেমেন্ট করা যায় কোন ঝামেলা ছাড়াই। তাছাড়া চীন, জাপান, মিডেল ইস্ট, ইন্ডিয়াসহ এশিয়ার বড় বড় দেশগুলো থেকেও অনলাইনে একটি ভিসা গিফট কার্ড কেনা যায়। গিফট কার্ড কেনার পর ভিসা সাইট থেকে আপনার আত্মীয়র মেইলে একটা ভার্চুয়াল কার্ড চলে যায়। তারপর আপনার আত্মীয়কে বলেন ভার্চুয়াল কার্ডটি আপনার ইমেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে। ব্যাস! পেয়ে গেলেন আপনার ভার্চুয়াল ভিসা গিফট কার্ড। এবার আপনি এটি দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন।
দ্বিতীয়তঃ যাদের বিদেশে আত্মীয় স্বজন নাই। থাকলেও তাদের মাধ্যমে একটি গিফট কার্ড আনাতে পারছেন না। তাদের জন্য বাংলাদেশের কিছু ইকমার্স সাইট কাজ করছে। অ্যামাজনের মত আমাদের দেশের ইকমার্স সাইট গুলো থেকেও গিফট কার্ড ইস্যুGift সিস্টেম আছে, তবে বেশিরভাগই নিজেদের সাইটে কেনাকাটার জন্য গিফট কার্ড দেয়। বর্তমানে শুধুমাত্র বাংলাদেশে টপঅলব্র্যান্ড ইকমার্স সাইটের ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করা যায়। আশা করা যায় ভবিষ্যতে দারাজ, বাগডুমের মত সাইট গুলাও এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে।
গিফট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্টের ক্ষেত্রে সতর্কতা
গিফট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পেমেন্ট করার সময় কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন ধরেনঃ
– এই ধরণের গিফট কার্ড নেয়ার আগে নিশ্চিত হবেন যে কার্ড ইস্যু করার সময় যথেষ্ট পরিমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না।
– কোন পাবলিক সাইবার ক্যাফে থেকে আপনার ইমেইলে লগ ইন করবেন না।
– কার্ডের তথ্য গোপন কোথাও সেভ করে রাখুন। একটু সামান্য ভুলে আপনার কার্ডটি অন্যের হাতে পড়ে যেতে পারে।
– কার্ড এর নাম্বার বা পিন কোড কার সাথে শেয়ার করবেন না।
আশাকরি টিউনটি আপনাদের কাজে লেগেছে। ধন্যবাদ।