আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ । আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন সবাই । ভালো থাকাটাই সবসময়ের জন্য প্রত্যাশা ।
২০০৪ সাল থেকে যখন যাত্রা শুরু তখন গুটিকয়েক ছিলো ফেসবুকের ব্যবহারকারী । আর ২০১৫ সাল এখন পর্যন্ত ফেসবুকের ব্যবহারকারী ১৪৯ কোটি ছাড়িয়েছে । ক্রমান্বয়ে ফেসবুক বিপ্লব ছড়িয়ে যাচ্ছে অনলাইন বিশ্বে । সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি মার্কেটিং এর বড় একটি ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ ফেসবুক ।
ফেসবুকের যেমন ভালো দিক আছে, তেমন আছে মন্দ দিক । কিন্তু এ মন্দ দিকের জন্য ফেসবুককে দায়ী করা যাবেনা কোনভাবেই । এজন্য আমরাই অনেকাংশে দায়ী । কিছু পরিশ্রমী মানুষ যখন ফেসবুককে ভালো কাজে ব্যবহার করে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলছে, আবার পাশাপাশি কিছু মানুষ অলস সময় কাটিয়ে জীবনের দীর্ঘ সময় নষ্ট করছেন এ ফেসবুকে, যার কোন আউটপুট নেই । ক্রমান্বয়ে এ সময় অনেক বড় ঝুকিতে পরিণত হচ্ছে । অলস সময় কাটানো ছাড়াও মন্দ কাজে ফেসবুক ব্যবহারের দরুন আজকের সমাজ আজ চরম অবক্ষয়ের শিকার । পাশাপাশি আজকের তরুণ সমাজ এখন পুরোপুরি সেলফি জ্বরে আক্রান্ত । ক্রমান্বয়ে ঘটছে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় । আস্তে আস্তে মানুষ হয়ে যাচ্ছে পুরোপুরি ফেসবুক নির্ভর, একদিন ফেসবুকে না ঢুকলে যেন পেটের ভাতই হজম হবে না । শুধু তাই নয়, রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জাগলে তাও নোটিফিকেশন চেক করতে হবে, কোন ছবিতে লাইক পড়লো, কতগুলো পড়লো, কোনটা শেয়ার হলো, কে মন্তব্য করলো । এতে করে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলো অচিরেই হারিয়ে যাচ্ছে ।
পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও আন্তর্জাতিক সর্বক্ষেত্রে ফেসবুকের ব্যাপক প্রসারের কারণে এটি যেন ক্রমান্বয়ে নতুন প্রজন্মের রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে । মানুষ যেন আজ নিজেদের দিকে তাকাতেই ভুলে যাচ্ছে, ভুলে যাচ্ছে নিজের পরিবারকে সময় দিতে । সবকিছুর পাশেও ফেসবুক কিঞ্চিৎ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই অনেকে মনে করেন ।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুক বন্ধ থাকায় অনেক উপকারিতা পাওয়া গিয়েছিল । গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক বন্ধ ধাকলে অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই বেশী । পরিবারের সদস্যগণ পরস্পরের প্রতি মনোযোগী হচ্ছে, ছেলে মায়ের প্রতি যত্নশীল হয়েছে, ছাত্র/ছাত্রীরা সকালেই ক্লাশে হাজির হচ্ছে । সর্বোপরি ভার্চুয়াল জগত থেকে বাস্তব জগতে অধিকাংশ মানুষই মনোযোগী হওয়ার সুযোগ ছিলো । যেটি চালু হওয়ার পর আবার হারিয়েছে । বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য ফেসবুক বন্ধ থাকার উপকারীতা রয়েছে। আর অপকারিতার কথা আগেই শুনেছেন । ফেসবুক এর মাধ্যমে যারা ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতেন, তারা সমস্যায় পড়েছিলেন । তবুও অনেকে ভিপিএন এর সহায়তায় ব্যবহার করলেও সরকারের কড়া নজরদারির কারণে সে সংখ্যা পরিমাণে কম । সবমিলিয়ে ফেসবুকেই ব্যবসা বাণিজ্য, ফেসবুকেই বিনোদন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রেম ভালোবাসা সহ যাবতীয় আড্ডা ফেসবুকেই করা হচ্ছে ।
ফেসবুকের কিছু বিষয় আমাদের মনে পজিটিভ ও নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করে । যখন কেউ সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কোন ছবি পোস্ট করেন তখন অনেকে ক্ষেত্রেই সচেতনতা তৈরী হয় । আবার যখন কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটে তখন মিডিয়ায় আসার পূর্বেই আমরা সে খবর ফেসবুকে পেয়ে যাই, এমনকি ছবি সহ । পাশাপাশি সামার্জিক অবক্ষয়ের নমুনা হিসেবে কোন ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারলে সেটির বিচার খুব দ্রুত হতেও দেখা গেছে । সবমিলিযে ফেসবুকের যেন জুড়ি নেই । তবু নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে কয়েক দফা মিটিং হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের । কাজেই এখনো সর্তকর্তার সাথে ব্যবহার করতে হবে। নজরদারীতে রয়েছে যেকোন উষ্কানীমূলক বক্তব্য, আপত্তিকর ছবিসহ নানা দিক ।
সাম্প্রতিক ফেসবুকে কিছু নজীরবিহীন পরিবর্তন আনা হয়েছে । পর্যায়ক্রমে আরো পরিবর্তন আসতে থাকবে । পাশাপাশি বাদ হয়ে গেছে অনেক ফেইক একাউন্ট । অতএব, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলো ফেসবুকে শেয়ার করে নিজেকে পুরোটাই জাহির করতে যাবেন না । ফেসবুক আপনার জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় । আমাদের সমাজে যে হারে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে চলেছে তার হাল ধরা জরুরী । সংসারে অশান্তি, পাারবিারিক কলহ, হত্যা, খুন এসব অপরাধ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে । এসবের জন্য ফেসবুক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। বিশেষভাবে ফেসবুক ব্যবহারকারী এর সুযোগ নিয়েছিন বিভিন্নভাবে । অতএব, ছবি, কমেন্টস ও লাইকের মাঝেই ফেসবুককে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক জনকল্যাণমূলক কাজেই বেশী বেশী ব্যবহার বাড়ানো জরুরী। তাতে আমাদের সমাজের যে অবক্ষয় ঘটেছে, তা দূর হতে পারে এ ফেসবুকের মাধ্যমেই । শুভ কামনা রইলো ।
আমার ফ্যানপেজ – অনলাইন আর্নিং এ্যান্ড আউটসোর্সিং ।